চা না কফি? এই প্রশ্নটার সম্মুখীন আমরা প্রায় সবাই হয়ে থাকি প্রত্যেহ। কেউ চা পছন্দ করি, কেউবা কফি। তবে বাঙালি হিসেবে বেশিরভাগ মানুষই চা-প্রেমি। মিসির আলির মতো প্রতি ঘন্টায় চা না হলে অনেকের চলেই না! তবে কফি-প্রেমিও যে একেবারে নেই তাও নয়। আর কোনটা ভালো? চা, না কফি? এ নিয়ে আমাদের মাঝে রয়েছে তুমুল সমালোচনা। চা বা কফি, দুটোই সারা পৃথিবী জুড়ে ব্যাপক পরিমাণে পান করা হয়। তবে কিছু শতাব্দী পূর্বেও ভারতবর্ষে চা বা কফির প্রচলন ছিলো না। শুনতে অবাক লাগলেও, ভারতবর্ষে চায়ের পূর্বে কফির প্রচলন ঘটে। ভারতবর্ষে চা পরিচিতি পায় ব্রিটিশদের মাধ্যমে, ১৮৩৬ সালে। আর কফি ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসারও পূর্বে, ১৬৭০ সালে "বাবা বুদান" নামক এক সুফি সাধকের মাধ্যমে আসে। এভাবেই ভারতবর্ষে চা ও কফির প্রচলন ঘটেছিলো। সেই থেকেই আস্তে আস্তে এখন চা ও কফি আমাদের প্রত্যহ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চা বা কফি কি আমাদের প্রত্যেহ পান করা উচিত? আর কোনটি আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর? চা নাকি কফি? চলুন জেনে নেওয়া যাক। মর্ডান সাইন্স এর তথ্য অনুযায়ী, চা এবং কফি দুটোই নন-অ্যালকোহলিক পানীয় এবং পান করার জন্য নিরাপদ। প্রথমে চা এবং কফির উপকারিতাগুলো জেনে নিন। ❏ চায়ের উপকারিতা: ১. চায়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ২. টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, ৩. চায়ে প্রচুর ECGC থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে, ৪. ক্লান্তি দূর করে এনার্জির ঘাটতি পূরণ করে, ৫. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ❏ কফির উপকারিতা: ১. কোলন ও প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ২. টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, ৩. ডিমেনশিয়া রোগের ঝুঁকি কমায়, ৪. পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমায়, ৫. ওজন কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে, ৬. খুব দ্রুত এনার্জি বুস্ট করতে পারে। এছাড়াও চা ও কফির বিভিন্ন উপকারিতা খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু শুধু উপকারিতা নিয়েই কথা বলতে থাকলে কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর তা নির্ধারণ করা যাবে না। তাই চা এবং কফির মধ্যে থাকা কিছু একই উপাদানসমূহ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করলে আমরা বুঝতে পারবো কোনটি আমাদের জন্য অধিক স্বাস্থ্যকর। চা এবং কফির উপাদানসমূহ: চা এবং কফির দুটোতেই রয়েছে: ১. ক্যাফেইন, ২. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ৩. ট্যানিন। এই উপাদানগুলো নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করলে আমরা কিছুটা ধারণা পাব। ক্যাফেইন: চা এবং কফি দুটোতেই ক্যাফেইন থাকলেও চায়ের তুলনায় কফিতে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। সাধারণত ১ কাপ চায়ে ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। অন্যদিকে সমপরিমাণ ১ কাপ কফিতে ৮০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন থাকে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা ক্ষতিকর। কাজেই বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা হতে পারে। যেমন: বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, অনিদ্রা, স্ট্রেস বৃদ্ধি, হার্ট রেট বৃদ্ধি এবং মাঝে মাঝে মৃগী রোগীদের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণে আসক্তি সৃষ্টি হয়। ক্যাফেইন ব্রেইনে ডোপামিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন ইত্যাদি হরমোনের অধিক ক্ষরণ ঘটায়। এতে করে ক্যাফেইনে আসক্তি সৃষ্টি হয়। ফলে অনেকেই কফি ছাড়া দিন শুরু করতে বা কাজে মন বসাতে পারে না। অন্যদিকে চায়ে ক্যাফেইনের পরিমাণ কম থাকায় এটিতে তুলনামূলকভাবে আসক্তি কম সৃষ্টি হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্তে মিশে থাকা ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান দূর করতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সাহায্য করে। চা ও কফি দুটোতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। তবে কফি হতে চায়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো অধিক ভালো আমাদের শরীরের জন্য। কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে চায়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ট্যানিন: ট্যানিন মানবদেহের জন্য একটি ক্ষতিকারক উপাদান। এটি শরীরে আয়রনের শোষণে বাধা দেয়। যার ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এছাড়াও এটি দাঁতে দাগ সৃষ্টি করে। কফি হতে চায়ে ট্যানিন অধিক পরিমাণে বেশি থাকে। তাহলে কোনটা বেশি স্বাস্থ্যকর? সবদিক থেকে বিশ্লেষণ করলে কফির থেকে চা-ই বেশি স্বাস্থ্যকর প্রত্যেহ গ্রহণের ক্ষেত্রে। কিন্তু কফির উপকারিতা ও কার্যক্ষমতা চা হতে অনেক বেশি। তাই চা ও কফি কোনটি অধিক স্বাস্থ্যকর, তা নির্ভর করছে প্রত্যেকের নিউট্রিশন ও চাহিদার উপর। সঠিকভাবে চা ও কফি গ্রহণের পদ্ধতি: ১. চা বা কফিতে চিনি যথাসম্ভব কম মিশিয়ে খাওয়া। ২. সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি গ্রহণ না করা। ৩. খাবারের ৩০ মিনিট পর চা বা কফি গ্রহণ করা। ৪. ব্ল্যাক কফি অতিরিক্ত না খাওয়া। ৫. দিনে ৫/৬ কাপের বেশি চা এবং ২/৩ কাপের বেশি কফি না খাওয়া। ৬. পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের দিনে ৪০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা উচিত নয়। কি ধরণের চা ও কফি গ্রহণ করবো? সবচেয়ে ভালো চা হচ্ছে গ্রিন টি, অর্জুন টি, ব্ল্যাক টি, লিকার টি, তুলসি চা ইত্যাদি। সবচেয়ে ভালো কফি হচ্ছে ডিক্যাফে কফি, ব্ল্যাক কফি, গ্রীন কফি।