বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ২০২৩ সালে আসন্ন অর্থমন্দা ও দুর্ভিক্ষ। এই অর্থমন্দা ও সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের দুইটি বড় কারণ হলো ২০২০ সালের কোভিড-১৯ এবং ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মুদ্রাস্ফীতি। আমরা সবাই জানি বর্তমান বিশ্বে একমাত্র গ্লোবাল কারেন্সি হচ্ছে ডলার। গ্লোবাল কারেন্সি কেবল একটি হওয়াতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের মুদ্রা ভিন্ন হওয়াতেই এমনটি হচ্ছে। কিন্তু এই সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে। আর তা হচ্ছে বিটকয়েন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি শব্দটি ভেঙে আমরা পাই দুটি শব্দ: Crypto এবং Currency। - Crypto এসেছে গ্রিক শব্দ Kruptos থেকে, যার অর্থ গোপন বা গুপ্ত। - Currency অর্থ মুদ্রা। অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সির আক্ষরিক অর্থ গুপ্ত মুদ্রা। এটি এক ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি, যা ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রীভূত পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। ক্রিপ্টোগ্রাফি প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি নিরাপদ করা হয়। বিটকয়েনের ইতিহাস সর্বপ্রথম প্রচলিত ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো বিটকয়েন। ২০০৯ সালের অক্টোবরে সাতোশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) নামে এক ব্যক্তি বা দল একটি ওয়াইটপেপার প্রকাশ করেন। এতে তারা দাবি করেন, তারা এমন একটি ডিসেন্ট্রালাইজড ডিজিটাল কারেন্সি তৈরি করেছেন যা ডাবল স্পেন্ড প্রবলেম সমাধান করতে সক্ষম। অর্থাৎ, এখানে কোনো থার্ড পার্টি (সরকার বা ফেডারেল ব্যাংক) নিয়ন্ত্রণ করবে না। বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে? বিটকয়েনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হলো ব্লকচেইন (Blockchain)। এটি একটি পাবলিক লেজার, যেখানে প্রতিটি বিটকয়েন ট্রানজেকশনের হিসাব সংরক্ষিত থাকে। এই লেজার কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, বরং এটি বিশ্বের হাজার হাজার কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বিটকয়েন উৎপাদন (মাইনিং) পদ্ধতি - বিটকয়েন উৎপাদন পদ্ধতিকে বলা হয় মাইনিং (Mining)। - কম্পিউটার প্রসেসিং পাওয়ার ব্যবহার করে লেনদেন লিপিবদ্ধ ও সত্যায়ন করা হয়। - ২১৪০ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ২১ মিলিয়ন (২১,০০,০০০) বিটকয়েন তৈরি করা হবে। এরপর নতুন বিটকয়েন উৎপাদন করা যাবে না। - এটি ফিয়াট কারেন্সির মতো ইচ্ছেমতো ছাপানো যায় না। বিটকয়েন কেন ভবিষ্যতের কারেন্সি হতে পারে? বিটকয়েনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি মুদ্রাস্ফীতি রোধ করতে পারে।
✅ নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ: - বিটকয়েনের সরবরাহ নির্দিষ্ট (২১ মিলিয়ন), ফলে অতিরিক্ত মুদ্রণ বা মূল্যহ্রাসের ঝুঁকি নেই। - ফিয়াট কারেন্সি (যেমন ডলার, টাকা) অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছাপানো যায়, যা মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায়।
✅ ডিসেন্ট্রালাইজড: - বিটকয়েনের কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। - সরকার বা ব্যাংক এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
✅ গ্লোবাল কারেন্সি: - বিটকয়েন হলে সব দেশে একই কারেন্সি ব্যবহৃত হবে। - উন্নয়নশীল দেশগুলো ডলারের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। বিটকয়েন ফিউচার কারেন্সি হতে পারবে? বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ব্যাপক হলেও এটি সহজ নয়।
চ্যালেঞ্জসমূহ: - বর্তমান ফিয়াট কারেন্সি সিস্টেম (প্রায় ৯০ বছর ধরে চালু) পরিবর্তন করা সহজ নয়। - সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিমালা। - ট্রানজেকশন সময় ও খরচ (বর্তমানে কিছুটা বেশি)। শেষ কথা বিটকয়েন ভবিষ্যতে বিশ্বের প্রধান কারেন্সি হতে পারে, তবে এটি সময়সাপেক্ষ। বিশ্ব যদি ডিসেন্ট্রালাইজড অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে বিটকয়েনই হতে পারে ভবিষ্যতের প্রধান কারেন্সি।