ফাহিমের হাতে অনেক কাজ বাকি, কিন্তু চোখ ভেঙ্গে ঘুম আসছে। অথবা মাহিমের কালকে পরীক্ষা। আজকে অনেক পড়তে হবে ঘুমানোর সময় নেই কিন্তু একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো। এমন অবস্থা আমাদের প্রায় কমবেশি সবারই হয়েছে। তখন আমরা জোর করে কাজে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মনোযোগ আর আসে না। আচ্ছা যখন ঘুমই আসছে তো কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলেই তো হয়। অবাক লাগছে শুনতে তাই তো! তবে আপনি জানেন কী এইযে একটু ঘুম আপনাকে আগের চেয়ে আরও বেশি উদ্যমে কাজ করতে সাহায্য করবে। এই ঘুমটাই হচ্ছে পাওয়ার ন্যাপ। চলুন তাহলে আজকে আমরা জেনে নিই এই পাওয়ার ন্যাপ সম্পর্কেঃ পাওয়ার ন্যাপ কী? ন্যাপ শব্দের অর্থই হলো অল্প সময়ের ঘুম। পাওয়ার ন্যাপ হলো অল্প সময়ের ঘুম, যা গভীর নিদ্রার আগেই ভেঙে যায়। এই পাওয়ার ন্যাপের দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৪০ মিনিট। একদম না ঘুমানোর চাইতে অল্প সময়ের ঘুম বা পাওয়ার ন্যাপ বেশ উপকারী। এটি আমাদের শরীরে অনেক টা মোবাইল বা কম্পিউটার এর রিবুটের মতো কাজ করে। পাওয়ার ন্যাপের উপকারিতাঃ ১. কাজে, পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়ায়। ২. স্ট্রেস লেভেল কমায় এবং ইমিউন সিস্টেম সচল রাখে। ৩. ক্লান্তি ও অবসন্নতা ভাব কেটে যায় এবং নতুন উদ্যমে কাজ করার শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ৪. শেখার ক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ৫. সৃজনশীল কাজের দক্ষতা বাড়ায়। ৬. হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ৭. সেল ক্ষয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ৮. শরীরের বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে। ৯. মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। ১০. মুড ভালো রাখে। কীভাবে পাওয়ার ন্যাপ নিতে পারি? ক. প্রথমে এই অল্প সময়ের ঘুম আপনার ঠিক মতো নাও হতে পারে। এর জন্য একটা সঠিক সময় ঠিক করে নিন। যেমন ধরুন দুপুর বেলা। যাতে আপনার দেহঘড়ি অভ্যস্ত হয়ে যায়। এরপর প্রতিদিন ঐ একই সময়ই একটু ঘুমান। খ. ৩০ মিনিট বা এর চেয়ে একটু কম ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ফোনে এ্যালার্ম দিয়ে রাখুন। কারণ বেশি ঘুমালে আবার আলসেমি, স্লিপ ইনারশিয়া সহ আরও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। গ. আপনার পছন্দের শান্ত মিউজিক শুনে ঘুমাতে পারেন। ঘ. আশেপাশের পরিবেশ অবশ্যই শান্ত হতে হবে। ঙ. রুমটা একটু অন্ধকার হতে হবে। অথবা আই মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘুমটা তাড়াতাড়ি আসবে। চ. উষ্ণ থাকতে হবে। বেশি ঠান্ডা হলে গায়ে পাতলা কাঁথা অথবা ব্লাঙ্কেট দিয়ে ঘুমাতে পারেন। এতে ঘুম ভালো হয়। কিছু পরামর্শঃ মনে রাখা দরকার যে ৪০ মিনিটের উপরে ঘুমালে তা কোনো উপকারে আসবে না। তখন আপনাকে টানা ৯০ মিনিট বা দেড় ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতে হবে। কারণ দেড় ঘন্টায় আমাদের ঘুমের চক্র পূরণ হয়। তাই এরপর ঘুম ভাঙলে আমাদের মস্তিষ্ক উল্টা পাল্টা আচরণ করবে না। আবার পাওয়ার ন্যাপ নেওয়ার সময় যেন বিকাল ৩ টা পার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখুন। কারণ বিকেল তিনটের পর ঘুমালে আপনার রাতের ঘুমের বারোটা বাজার সম্ভাবনা আছে! বিশ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপের জন্য কফি খেয়ে ঘুম দিতে পারেন। কারণ ক্যাফেইন আমাদের শরীরে বিশ মিনিটের পর কার্যকারিতা শুরু করে। তাই কফি পান করেই ঘুম দিন যাতে বিশ মিনিট পর ঘুম ভেঙে যায়। তবে এটা ছাড়াও আপনি ঘড়ি বা ফোনে এ্যালার্ম দিয়ে রাখতে পারেন, অথবা বিশ মিনিট পর কাউকে ডেকে দিতে বলতে পারেন। পরিশেষে বলা যায় যে, সঠিকভাবে পাওয়ার ন্যাপ গ্রহণ করলে এটা শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি কর্মদক্ষতা বাড়াতে ও বেশ কাজে লাগে।