বই না পড়ার কারণে অধিকাংশ নতুন প্রজন্ম অন্ত:সারশূন্য হয়ে বেড়ে উঠছে। দেহকে বাঁচাতে গেলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি আত্মার খাদ্য বই। কেননা বই একমাত্র প্রকৃত বন্ধু। বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তার বইকেনা প্রবন্ধে বলেছেন, "রুটি, মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার দুটি চোখ কালো হবে, কিন্তু বই অনন্ত যৌবনা।”
প্রতি বছর পহেলা ফেব্রয়ারী বাংলা একাডেমি ভাষা শহীদদের স্মৃতির স্মারক স্বরূপ অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করে থাকে। বইমেলা তো বাংলাদেশী মানুষের মর্মসঙ্গীত। বইমেলা মানে আধুনিকতার প্রথম সূর্যোদয়, যে সূর্য কখনো অস্তমিত হবার নয়। এ যেন এক অনিঃশেষ ফাল্গুন, অনিঃশেষ বসন্ত, অনিঃশেষ বর্ষা, অবারিত সবুজ যা কখনো শেষ হবার নয়।
একুশে বই মেলার লক্ষ্য উদ্দেশ্য বহুমাত্রিক। নবীন প্রবীণ লেখকদের বিভিন্ন বই নানা ধরনের পাঠক পাঠিকা তাদের মনের রুচি অনুযায়ী ক্রয় করে। অনেক পাঠক আছে যারা বই মেলা থেকে একাধিক বই ক্রয় করে। প্রকৃত পক্ষে বই মেলা যেন হাজারও পাঠকের মিলন মেলা। বই মানুষের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু। মানুষকে নিয়ে যায় এক গভীর জ্ঞানের রাজ্যে। যেখানে শুধু শান্তি আর প্রশান্তি।
১৯৬৭ সাল থেকে বই মেলার সাথে এ ভূখন্ডের মানুষের আত্মার সম্পর্ক। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, একুশে গ্রন্থ মেলা থেকে বই ক্রয় করা এক ধরনের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কারণ সে বই কেউ পড়ে, কেউ পড়েনা। তাছাড়া আজকের যুগে সবার বই পড়তে খুব একটা ভালোও লাগে না।
তবে কবিগুরু বলেছেন, একটি পাঠ্যবইকে হজম করতে হলে অপাঠ্য বইয়ের দরকার। কিন্তু এ দরকার মানেই বেশি করে বই পড়া। শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি অপাঠ্য বই পড়ার উৎসাহ তৈরি করা দরকার যাতে করে শিক্ষার্থীদের মেধামনন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ে। অথচ বই পড়া বা সাহিত্যচর্চা ছাড়া যে জ্ঞানী হওয়া যায় না সেটা আজকের প্রজন্ম প্রায় ভুলেই গেছে।
পরিশেষে, বই মানুষের মনকে সহজ, সরল, সজাগ, শুভ্র করে, কালিমা মুুক্ত করে, পুত-পবিত্র করে, একজন মানুষকে সত্যিকার আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে যে বই মেলা উদযাপিত হচ্ছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ করে বইমেলার আবহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বই হোক আমাদের পথ চলার পাথেয়। বইকে সাথে নিয়েই আমাদের জীবনের সামনের দিনগুলো অতিবাহিত হোক। বই হোক আমাদের নিত্য সঙ্গী।