সৌন্দর্য আসলে কি? আপনি কি আসলেই সুন্দর?

সৌন্দর্য আসলে কি? আপনি কি আসলেই সুন্দর?

বিখ্যাত মনিষী কনফুসিয়াসের উক্তি - ‘Everything has its beauty, but not everyone sees it’ অর্থাৎ, সৌন্দর্য সবার মধ্যেই আছে, কিন্তু সবাই তা দেখতে পায় না। সৌন্দর্য এমন একটি ধারণা যার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধির বিষয়, এবং একেকজনের চোখে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা একেক রকম।

বার্গমানের মতে - ‘সৌন্দর্যের বস্তুগত সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। সৌন্দর্যের অনুভূতি ঘটে শুধুমাত্র আত্মগতভাবে।’

বাহ্যিক সৌন্দর্যের সংজ্ঞা

বাহ্যিক সৌন্দর্য বলতে সাধারণত যা দেখতে আকর্ষণীয়, মনোমুগ্ধকর, তাই বোঝানো হয়। তবে, বাহ্যিক সৌন্দর্যের কোনও আদর্শ মানদণ্ড নেই। একজন মানুষের কাছে যা সুন্দর, অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ এঞ্জেলিনা জোলিকে সুন্দর মনে করতে পারেন, আবার অন্য কেউ তাকে আকর্ষণীয় নাও ভাবতে পারেন। যদি সৌন্দর্যের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা থাকতো, তাহলে সবাই একই ব্যক্তিকে সুন্দর মনে করতো।

আমরা দক্ষিণ এশীয়দের মধ্যে অনেকের ধারণা, সৌন্দর্য মানেই ফর্সা ত্বক। অথচ পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখা যায়, অনেকেই নিজেদের ত্বকের রঙকে গাঢ় করতে সান-বাথ করে। সেখানে ব্রাউন স্কিনকে আকর্ষণীয় মনে করা হয়। তাহলে কেন আমরা এখনো ফর্সা ত্বককে সৌন্দর্যের একমাত্র মাপকাঠি মনে করি?

সৌন্দর্যের প্রকৃত রূপ

ফর্সা-কালো, ছোট চোখ, বোঁচা নাক, মোটা বা পাতলা ঠোঁট, কোঁকড়ানো বা সোজা চুল, লম্বা বা খাটো উচ্চতা – এসব শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সৌন্দর্য নির্ধারণ করা যায় না। সৌন্দর্য দেখার জন্য শুভ্র পবিত্র দৃষ্টি থাকা প্রয়োজন। যিনি খুনী, তার চোখে নীতিবান মানুষও খারাপ মনে হতে পারে। কিন্তু একজন নীতিবান ব্যক্তি সবাইকে ভালোভাবে দেখেন।

সৌন্দর্যের মধ্যে কেবল বাহ্যিক দিক নয়, বরং ব্যক্তিত্ব, চারিত্রিক গুণাবলিও অন্তর্ভুক্ত। যদি কেউ বাহ্যিকভাবে খুব সুন্দর না-ও হন, কিন্তু তার মন পরিশুদ্ধ ও মহৎ হয়, তাহলে তাকেও সুন্দর বলা যায়।

সৌন্দর্যের ভুল ধারণা ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার গায়ের রঙ কালচে হওয়ার কারণে তাকে একসময় কটাক্ষ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি আজ বলিউড ও হলিউড উভয় ক্ষেত্রেই নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন এবং মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জিতেছেন। একইভাবে, অনেক বিশ্বসুন্দরীর গায়ের রঙ শ্যামলা বা বাদামী, যা প্রমাণ করে যে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ত্বকের রঙ দ্বারা নির্ধারিত হয় না। অন্যদিকে, গুগলে ‘Ugliest Person’ লিখে সার্চ করলে দেখা যায়, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই ফর্সা ত্বকের অধিকারী। তাহলে গায়ের রঙ কীভাবে সৌন্দর্যের পরিমাপক হতে পারে?

সৌন্দর্যের আধুনিক সংজ্ঞা

কয়েক দশক আগেও সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ছিল ফর্সা ত্বক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজন্ম এই ধারণা ভেঙে নতুন চিন্তাধারা নিয়ে এসেছে। বহুল জনপ্রিয় বিউটি ব্র্যান্ড ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ তার নাম পরিবর্তন করে ‘গ্লো অ্যান্ড লাভলি’ করেছে, যা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে সৌন্দর্যের মূল বিষয় হলো উজ্জ্বলতা ও সুস্বাস্থ্য, ত্বকের রঙ নয়।

সুন্দর থাকতে হলে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যদি কেউ মোটা বা খাটো হন, তাহলে তাকে এই বলে সান্ত্বনা দেওয়া উচিত নয় যে, ‘কালো হলেও ফেস কাটিং ভালো’ কিংবা ‘সুন্দরীদের মন ভালো হয় না, তোমার মনটা ভালো।’ বরং বলা উচিত, ‘তোমার এই জিনিসটা এত সুন্দর!’ কারণ সৌন্দর্য সবার মাঝেই রয়েছে।

সৌন্দর্যের আসল অর্থ

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ত্বকের রঙের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আপনি নিজেকে কতটা ভালোবাসেন, কিভাবে উপস্থাপন করেন, এবং কিভাবে নিজের যত্ন নেন – সেটাই সৌন্দর্য। আপনি যদি নিজেকে সুন্দর মনে করেন, তাহলে আপনিই সুন্দর।

উপসংহার

সৌন্দর্য দেখতে জানতে হয়, উপলব্ধি করতে জানতে হয়। যার অন্তরে সৌন্দর্যের বোধ নেই, তার চোখে কিছুই সুন্দর নয়। সৌন্দর্য মানে আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব, এবং ভালোবাসা। তাই, নিজেকে চিনুন, যত্ন নিন, এবং নিজের সৌন্দর্যকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করুন।

লেখকঃ আয়শা সিনীন খান

তথ্যসূত্রঃ

  • Jagonews24.com

  • Sajgoj.com

  • Quotes from Google.com