কোন রকম টাকাপয়সা খরচ না করেই একান্ত নিজস্বভাবে নিজস্ব পন্য বা নিজস্ব সেবা প্রচার করাকেই অর্গানিক মার্কেটিং বলা যায়। অর্থাৎ এ মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিনামূল্যে আপনার পণ্য বা সার্ভিসকে মার্কেটিং করা হয়।
অর্গানিক মার্কেটিং ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব ইত্যাদি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে করা যায়। তবে সব কয়টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এজন্য এখানে মার্কেটিংও হয় বেশি। সঠিকভাবে অর্গানিক মার্কেটিং করতে পারলে একটি পেজে আসতে পারে অভূতপূর্ব সাফল্য।
বর্তমানের এই প্রতিযোগিতার যুগে পেজ ক্রিয়েট করা যতটা লাভজনক ঠিক সেই পেজে রিচ বাড়ানো ও তা ধরে রাখা ততটাই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। সেজন্য সঠিক প্ল্যানমাফিক মার্কেটিং একান্ত জরুরি। স্মার্ট এবং পরিকল্পিত টিপস জানা প্রয়োজন।
অর্গানিক মার্কেটিং করতে হলে কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনাদের জন্য ১০ টি টিপস দেয়া হলোঃ
১. ফেসবুকে ইমেজ বা ভিডিও পোস্ট
একটি আকর্ষণীয় পোস্টার বা ভিডিও আপনার পোস্টে এনে দিতে পারে অভূতপূর্ব রিচ।
কোন Post যখন নিউজফিডে আসে, তখন সবার আগে যা নজর কাড়ে তা হলো সুদৃশ্য ইমেজ বা ভিডিও। আজকাল ভিডিও কন্টেন্টের রিচ অনেক বেশি হলেও ফেসবুকে অর্গানিক মার্কেটিং করতে গেলে সুন্দর ইমেজ হতে পারে বেস্ট অপশন!
আপনার মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা বেশিরভাগই বড় লেখা পড়তে চান না। তারা মজার কিছু চায়। এমন কিছু যা নজর কাড়ে। তাই ইমেজ বা ভিডিওটি এমন হতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় সব তথ্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা সেখান থেকেই পায়। এরপর বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হলে টেক্সট পড়তে যাবে অডিয়েন্সরা।
২. লিংক শেয়ার
আপনার Post এ যদি কোন নিউজ থাকে এবং কোন রিসোর্সের লিংক থাকে তাহলে ইউজাররা নিজে থেকেই লিংকে ক্লিক করতে আগ্রহী হবে। আর লিংককে ক্লিক করলে এনগেজমেন্ট বাড়বে এবং Post বেশি প্রমোট হবে।
তবে ফেসবুক এলগোরিদম লিংকযুক্ত পোস্টকে সাপোর্ট করে কম। লিংক পোস্টের রিচ কমিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রেও হতাশার কিছু নেই। আপনি যখন কিছু পোস্ট করতে যাবেন, তখন লিংক দিলে তার প্রিভিউ আসে। আপনি যদি কোন ইমেজ বা ভিডিও শেয়ার করেন সেই Post এ তাহলে ফেসবুক বুঝবে না যে এটা লিংকযুক্ত Post, তখন এলগোরিদম অনুযায়ী রিচ বাড়িয়ে দেয়।
৩. ডে স্টোরি শেয়ার
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা নিউজফিডের চেয়ে স্টোরিকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ এতে স্বল্প পরিসরে অনেক কিছু জানা যায়। তাই আপনি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দিনে ২-৩ টি স্টোরি শেয়ার করে দিবেন নিয়মিত। আপনার পেজের এঙ্গেজমেন্ট বাড়বে, অডিয়েন্স আগ্রহী হবে।
ইন্সটাগ্রাম থেকে Crossing এর মাধ্যমে স্টরি দিলে বেটার হয়। Crossing হচ্ছে একই স্টরি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা। ইন্সটাগ্রামের স্টরি ফিচার অনেক আকর্ষণীয় ও লাভজনক। তাই এখানে স্টরি ক্রিয়েট করে ফেসবুকে শেয়ার করে দিলে পেজের এঙ্ঙ্গেজমেন্ট বাড়বে। নতুন নতুন ফিচার, স্টিকার, সুদৃশ্য ফন্ট ব্যবহার করবেন। সবচেয়ে ভালো হয়, রিসেন্টলি ট্রেন্ড হওয়া কোন মিউজিক এড করে দিলে!
৪. নতুন নতুন ফিচার ব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়া এলগরিদম অনুযায়ী লেটেস্ট ফিচার ব্যবহারকারীরা লাভজনক হয়। নতুন ফিচার ব্যবহার করলে এমনিতেই রিচ বেড়ে যায়। তাছাড়া অডিয়েন্সও আকৃষ্ট হয়। নতুন কিছু কে না পছন্দ করে!
৫. কালারফুল ব্যাকগ্রাউন্ডের টেক্সট
ছোট টেক্সট দেয়ার বেলায় ফেসবুকের কালারফুল ব্যাকগ্রাউন্ড অপশনটি আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। চাইলে অ্যাভাটারও ব্যবহার করতে পারবেন। এতে অডিয়েন্স আকৃষ্ট হবে। আলাদাভাবে সুন্দর, নান্দনিক ব্যাকগ্রাউন্ডেও টেক্সট দিতে পারেন সেক্ষেত্রে।
৬. ফেসবুক লাইভ ভিডিও
লাইভে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপকারিতা হচ্ছে, একজন ক্রিয়েটর যখন লাইভে যায় তার ফলোয়ারদের কাছে নোটিফিকেশন গিয়ে থাকে। এতে ফলোয়ার নটিফাইড হয়, ক্লিক করে, রিচ এমনিতেই বেড়ে যায়।
এছাড়া ফলোয়ার্সদের মাঝে এগেজমেন্ট বজায় রাখার জন্যও এটি অত্যন্ত কার্যকরী পন্থা।
৭. ফেসবুক লাইভ অডিও রুম
লাইভ অডিও রুমে কোন ধরনের ক্যামেরা সেট আপ ছাড়াই, রিয়েল ভয়েসে রিয়েল টাইমে অডিয়েন্সদের সাথে যুক্ত হওয়া যায়।
গত কয়েক বছরের বিভিন্ন ঘটনায় অনুমেয় যে অডিয়েন্সরা এখন ইমেজ, ভিডিও কন্টেন্টের পাশাপাশি মার্কেটারদের সাথে সরাসরি কথা বলতে বেশ আগ্রহী। লাইভ রুম তাদের এই সুবিধাটি করে দিতে পারে বলে অর্গানিক রিচ গ্রো হয়।
লাইভ অডিও রুমের আরেক সুবিধা হল আপনি যখন অডিও লাইভ শুরু করবেন তখন আপনার প্রোফাইলে একটি Post তৈরি হবে এবং পেজের অডিয়েন্সরা নিজেদের নিউজফিডে তা দেখতে পাবে। চাইলে তারা পোস্টে টিউমেন্ট করতে পারবে, আপনি অডিও রুম থেকে বের হয়ে সেই টিউমেন্ট গুলোও পড়তে পারবেন।
৮. গ্রুপে শেয়ার
নিশ অনুযায়ী গ্রুপে আপনার প্রডাক্টস শেয়ার করলে ভালো মার্কেটিং করা যায়। সেক্ষেত্রে গ্রুপে সরাসরি Post করার চেয়ে পেজ থেকে শেয়ার করে Group এ Post করলে রিচ আসে বেশি। কারণ এতে অডিয়েন্স আপনার পেজে ক্লিক করে পেজ ঘুরেও আসতে পারে!
কিন্তু বেশিরভাগ গ্রুপ লিংক শেয়ার এপ্রুভ করে না। সেক্ষেত্রে আপনি প্রডাক্ট বিষয়ক Post করার পর পেজের লিংক এড করে দিতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি কতগুলো মেকআপ ফাউন্ডেশন বিক্রির Post দিলেন, সেখানে লিখতে পারেন, সুলভ মূল্যে ও ডিসকাউন্টে এমন আরও প্রডাক্টস কিনতে এই পেজটি ফলো করে আসুন, এরপর লিংক দিয়ে দিলেন। হয়ে গেল অর্গানিক মার্কেটিং!
৯. এঙ্গেজমেন্ট বাইট বন্ধ করুন
এঙ্গেজমেন্ট বাইট হচ্ছে Post এ অডিয়েন্সদের লাইক কমেন্ট শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করা। ফেসবুক বিশ্বাস করে, কারো কাছে লাইক কমেন্ট চেয়ে এঙ্গেজমেন্ট বাড়ানো যায় না। Post ভালো হলে এমনিতেই মানুষ রিচআউট করবে। এঙ্গেজমেন্ট বাইটের বিপরিতে আপনি যা করতে পারেনঃ
-
একটি পোস্ট করার পরে অডিয়েন্সরা সে সম্পর্কে কি চিন্তা করছে? সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন
-
আপনার পোষ্ট সম্পর্কে তাদের মতামত কি? এই সকল বিষয়গুলো জানতে চাইবেন বা সে বিষয় শেয়ার করার জন্য অডিয়েন্সদের উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
-
প্রশ্ন ছুড়ে দিবেন। যাতে করে তারা Post এ কমেন্ট করে।
১০. ইউটিউব লিংক শেয়ার বর্জন করুন
শুধু ইউটিউব লিংক শেয়ার আপনার রিচ কমানোর জন্য অনেকাংশে দায়ী হতে পারে। তাই এ থেকে বিরত থাকবেন।
এক্সট্রা টিপ্সঃ
ফেসবুকে পেইড মার্কেটিং এর তুলনায় এখনো অর্গানিক মার্কেটিং এক ধাপ এগিয়ে। এমন অনেক পেজ আছে কোন রকম পেইড এড ছাড়াই লক্ষ লক্ষ ফলোয়ারস, শুধুই অর্গানিক মার্কেটিং এর কারণে। তবে এভাবে সাফল্য পেতে হলে জানতে হবে সঠিক পদ্ধতি, অর্গানিক মার্কেটিং এর সাতকাহন। এছাড়া আপনার প্যাশনেট হতে হবে। একটি পেজ বিল্ডআপ হতে সময় লাগে, সেজন্য ধৈর্য থাকা জরুরি। প্যাশনেটলি নিয়মিত করে পেজে সময় দিলে অর্গানিক মার্কেটিং করতে হবে। তবেই সাফল্য সম্ভব।
লেখকঃ আয়শা সিনীন খান