Tesla’s Oscillator-  নিকোলা টেসলার  সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম আবিষ্কার

Tesla’s Oscillator- নিকোলা টেসলার সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম আবিষ্কার

১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি। 

হোটেল নিউইয়র্কারের ৩৩২৭ নাম্বার রুমের সামনে এসে থেমে যান পরিচালিকা এলিস মোনাঘান।

রুমের বাইরে বড় বড় করে টাঙানো ছিল " ডোন্ট ডিস্টার্ব " নামের সতর্কবাণী।

৮৬ বছর বয়সী এক রহস্যময় বৃদ্ধ বাস করেন এখানে। ভদ্রলোক বেশ অদ্ভুত। অনেকদিন ধরেই এখানে একা একা থাকছেন। কবুতরদের প্রতি রয়েছে তার অন্যরকম ভালোবাসা। তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে পার্কে যান কবুতরদের খাবার দেয়ার জন্য। আহত কবুতর দেখলে দৌড়ে গিয়ে চিকিৎসা আর সেবাযত্ন করা শুরু করে দেন। ব্যাপারটা রীতিমতো অবসেশনের পর্যায়ে চলে গিয়েছে।একবারতো গভীর রাতে পার্কে কবুতরদের খাবার দিতে গিয়ে তিনি গাড়ি দূর্ঘটনার শিকার হন। দূর্ঘটনায় তার কোমর আর পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়৷ ভদ্রলোক কেমন যেনো অন্যরকম ছিলেন। চিকিৎসার জন্য হসপিটালেও যাননি। ফলে সে আঘাতও কখনো পুরোপুরি সেরে উঠেনি৷

সে যাই হোক, বৃদ্ধের ঘরে প্রবেশ করে ভীষনভাবে চমকে যান পরিচালিকা এলিস। বিছানার ওপর পড়ে আছে বৃদ্ধের নিষ্প্রাণ দেহ। এবং এভাবেই সবার অগোচরে একা, নিঃস্ব আর দরিদ্র অবস্থায় পৃথিবী থেকে চলে যান প্রতিভাবান এক উদ্ভাবক। যার নাম নিকোলা টেসলা৷ অনেকে তাকে আধুনিক যুগের প্রমিথিউস নামেও চেনেন। চিকিৎসকদের মতে তার মৃত্যুর কারন করোনারি থ্রম্বোসিস।

অসম্ভব রকমের প্রতিভাবান এই মানুষটি বিদ্যুৎ আর শক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য সুপরিচিত। তিনি না থাকলে হয়তো আমাদের জীবন আজকের মতো হতো না! তার হাত ধরেই রোবট আর অটোমেশন টেকনোলজির উদ্ভব হয়েছিল। মানুষ যখন বিদ্যুৎকে ভয় পেতো, টেসলা তখন বিদ্যুৎকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ম্যাজিকের মতো নিয়ন্ত্রণ করতেন। এসি, রেডিও, এক্স - রে, ফ্লোরেন্স লাইট বাল্ব, টেসলা কয়েল, নিয়ন ল্যাম্প, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ড্রোন, রাডার, ইন্ডাকশন মোটর এ সব কিছুই নিকোলা টেসলার আবিষ্কার। জীবনের সিংহভাগ সময় তিনি কাটিয়ে দিয়েছিলেন অ্যানার্জি, ফ্রিকোয়েন্সি আর ভাইব্রেশন নিয়ে স্টাডি করতে করতে। তার মতে বিশ্বব্রক্ষান্ডের সকল রহস্য লুকিয়ে আছে শক্তি, ফ্রিকোয়েন্সি আর ভাইব্রেশনের মাঝে।

জিনিয়াস এই মানুষটি যেমন জীবন বদলে দেয়ার মতো বহু জিনিস তৈরী করেছেন, ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে  ভুলবশত ভয়ঙ্কর অনেক কিছুও  আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন। তার মধ্যে " Earthquake Generator Machine " অন্যতম। টেসলার মতে মেশিনটি এতোটাই ভয়াবহ ছিল, যে তা দিয়ে গোটা পৃথিবীকে নিমেষেই দু'ভাগ করে ফেলা যেতো! 

 

এবার চলুন তাহলে জেনে নেই ভয়ঙ্কর এই যন্ত্র আবিষ্কারের গল্পটি৷

 

ঘটনাটা ১৮৯৬ সালের।

টেসলা তার নিউইয়র্কের ল্যাবরেটরীতে Oscillator নিয়ে কাজ করছিলেন। তার মতে এটা ছিল একটা steam powered oscillator, যা কিনা কয়েক রকমের ফ্রিকোয়েন্সি তৈরী করতে পারতো। উক্ত ফ্রিকোয়েন্সিটি রেজোমেন্স ফ্রিকোয়েন্সির সাথে ম্যাচ করে গেলে একটা রিসিভিং ডিভাইস এই মেকানিক্যাল ওসিলিশেনকে ইলেকট্রিক কারেন্টে বদলে ফেলতে পারতো। যা কিনা খুব চমৎকার কিছু একটা হয়ে যেতো। 

 

১৮৯৭ সালে অনেক হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর অবশেষে টেসলার কাঙ্খিত মেশিনটি তৈরী হয়ে যায়। অতঃপর ১৮৯৮ সালে টেসলা সিদ্ধান্ত নেয়, উক্ত মেশিনটির একটি লেব্রেটরি টেস্ট করবেন। 

 

কিন্তু মেশিন অন করার সাথে সাথেই ঘটে গেলো ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। বিকটভাবে কেঁপে উঠলো তার ল্যাবরেটরী। ভূমিকম্প হয়েছে ভেবে প্রতিবেশীরা দ্রুত পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স কল করলো। 

 

টেসলা কিছু বললেন না। চুপচাপ তার ছোট্ট ডিভাইসটা নিয়ে একটা ১০ তলার  under construction বিল্ডিং এ চলে গেলেন। জিনিসটা এতোটাই ক্ষুদ্র আকৃতির ছিল, যে খুব সহজেই পকেটে জায়গা হয়ে যাচ্ছিলো। 

 

সেসময় বিল্ডিং এ অসংখ্য শ্রমিক কাজ করছিল। টেসলা সবার নজর বাঁচিয়ে বিল্ডিং এর একটা স্টিলে ডিভাইসটা সেট করে দেন। তারপর কাঁপা কাঁপা হাতে অন করে দেন ডিভাইসটার সুইচ। এবং সাথে সাথেই ঘটে গেলো ভয়ঙ্কর কান্ড!  

শত শত মজদুর ভয়ার্তভাবে দৌড়ে বের হয়ে আসলো বিল্ডিং এর ভেতর থেকে। তারা ভেবেছিল ভূমিকম্প হচ্ছে!  খবর পেয়ে সেদিন পুলিশও ছুটে এসেছিল। আর টেসলা বরাবরের মতোই চুপচাপ কিছু না বলে বের হয়ে আসেন সে জায়গা থেকে। 

 

পরবর্তীতে “ The World Today Magazine” এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে টেসলা রিপোর্টার “ Allan l. Besnson কে বলেন- 

 

“ এই ডিভাইসটি যদি আর মাত্র ১০ মিনিট সেখানে সেট করা থাকতো, তাহলে সম্পূর্ণ বিল্ডিংটি ধসে পড়তো!  

 

এই ডিভাইস এতোটাই শক্তিশালী, যে এর মাধ্যমে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে  ব্রুকলিন ব্রিজকে East River এ ফেলে দেয়া যেতো। কিংবা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গোটা পৃথিবীটার দু'ভাগ হয়ে যাবারও সম্ভাবনা ছিল!  “ 

 

প্রকৃতপক্ষে টেসলা আসলে এই ভয়ানক ডিভাইসটি বানাতে চাননি। তিনি আসলে এমন একটা ডিভাইস বানাতে চেয়েছিলেন, যেটা কিনা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তার ছাড়াই শক্তি / বিদ্যুৎ ট্রান্সফার করবে। পরবর্তীতে টেসলা ডিভাইসটির আর একটি উন্নত ভার্সন বানানোর চেষ্টা করেন। যা কিনা আকারে বিশাল বড় ছিল। টেসলা ভেবেছিলেন ডিভাইসটির উন্নত ভার্সন তাকে কাঙ্খিত ফলাফল দিবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।ভয়ানক ভূমিকম্পের অত্যাচারে তোলপাড় করে উঠে লাইব্রেরীসহ গোটা এলাকাটা।  এবং টেসলা আতঙ্কিত হয়ে খেয়াল করেন যে তিনি ডিভাইসটিকে কোনভাবেই থামাতে কিংবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না!  

 

অতঃপর নিরুপায় হয়ে টেসলা তার সাধের ডিভাইসটিকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙ্গে নষ্ট করে ফেলেন। এবং এভাবেই সমাপ্তি ঘটেছিল ভয়ঙ্কর একটি ভূমিকম্প উৎপন্ন করতে পারা যন্ত্রের!