আমি শুরু করেছিলাম শূন্যতার গভীরতা থেকে,
একটি নিঃশব্দ, নির্জন পথে, যেখানে শুধু অন্ধকার আর ছায়াই ছিল,
আমার ভেতরের ঝড়ের শব্দ গোপনে ঘুমের আড়ালে লুকিয়ে ছিল,
আর সেই নিঃশব্দ প্রশ্নগুলো বারবার যেন আমার হৃদয়ের দরজায় টিপে বলে—
“আমি কে? আমি কোথায় যাচ্ছি?”
প্রতিটি ধাপের সঙ্গেই বেজে উঠত এক অজানা, বিষণ্ণ সুর,
যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবের ফাঁকফোকর এক হয়ে মিশে যেতো,
শুধু আমি আর আমার ছায়া, দু’জন নিঃশব্দ যোদ্ধা, একান্ত এক কঠিন যুদ্ধে,
যেখানে কোনো সঙ্গী নেই, শুধু অদৃশ্য এক লড়াই, নিজের সঙ্গে নিজের।
হাত বাড়ালেও পাশে কেউ ছিল না,
আমার নিজের হাতটাই যেন এক ধূসর, কাঁপন্ত হাত যা দূরের কোনো কথা বলে,
আমি নিজেকে খুঁজে বেড়াই নির্জন, ধুলোমাখা, ফাঁকা রাস্তা দিয়ে,
কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে যেন পথটাই হারায়, আর মন হারিয়ে ফেলে সব আশা।
তুমি কি জানো? আমি কখনো নিজেকে ভালোবাসার সাহস পাইনি,
নিজের চোখের সাথে চোখ মিলানোর তীব্রতা থেকে লজ্জায় চুপচাপ হয়ে যাই,
কারণ আমার ভেতরে লুকিয়ে আছে এক ভীষণ চোরা ব্যথা,
যা যদি কেউ দেখতে পায়, সে ব্যথার গন্ধে হয়তো ছুঁড়ে ফেলবে আমাকে বেদনার অন্ধকারে।
তবুও এই যাত্রার মাঝেও জেগে থাকে এক অদ্ভুত, এক অবর্ণনীয় আশা,
একটি আলোর খোঁজ, একটি শান্তির নিঃসঙ্গ স্পর্শ,
যখন আমি নিজেকে বুঝতে পারবো, নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারবো,
তখন হয়তো হারানো সেই আমি ফিরে আসবে, আমার হাতে হাত রেখে।
আমি চলে এসেছি অসংখ্য পথে,
যেখানে হাসি আর অশ্রু একসঙ্গে মিশে গেছে,
একটি সময় ছিল যখন আমি ভাবতাম,
নিজেকে খুঁজে পাওয়া মানেই যাত্রার শেষ কথা।
কিন্তু ভুল ছিলো— আমার যাত্রা ছিলো দীর্ঘ, আরও কঠিন,
যেখানে আত্মার সঙ্গে লড়াই, নিজেকে বোঝার এক ভয়ংকর যুদ্ধ,
আমি কখনো যথেষ্ট ছিলাম না, কখনো অনেক বেশী, কখনো একেবারেই কম,
এই অবিরাম প্রশ্নের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছি বারবার, নিজেকে ভুলে।
আমি শুনেছি আমার হৃদয়ের গভীর গোপন কথা,
যা বলে— “নিজেকে ভালোবাসো, নিজেকে ক্ষমা করো”,
তবু আমি কেঁদেছি একাকীত্বের নিঃশ্বাসে, যখন নিজেকে হারিয়েছি,
অন্ধকারের গভীরে, যেখানে কোনো আলোই পৌঁছায় না।
আমি চেয়েছি আমার ভেতরের গোপন কথা প্রকাশ করতে,
কিন্তু আমার মুখ ছিলো বন্ধ, চোখ ছিলো বুজে, অদৃশ্যের সামনে ভয় পেয়ে,
আমি নিজেকেই পেতাম অপরিচিত, অজানা,
একটা অনবরত খোঁজ যা ছিলো এক নিবিড় সাধনা।
আমি আমার হাত বাড়ালাম নিজের জন্য,
নিজের বুকটাকে আঁকড়ে ধরে, যত্ন করলাম,
আমি কেঁদেছি, আমি হাসেছি,
আমি নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছি, ভাঙা সুরের মাঝে নতুন ছন্দ বুনে।
এই যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিলো ব্যথাময়,
তবুও সেই ব্যথাই আমাকে শিখিয়েছে,
কীভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করেই জয়লাভ করতে হয়।
আমি আজও চলছি, নিরব ভুবনে, নিজের পথ ধরে,
হয়তো একদিনের সূর্যের আলোয়, কোন বিকেলে,
আমি সত্যিকারের নিজেকে পাবো,
একটি নতুন রূপে, এক নতুন আলোর ঝলকে।
অবশেষে আমি বুঝেছি—
নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মানে হলো নিজেকে মেনে নেওয়া,
নিজেকে ক্ষমা করা, নিজের সঙ্গে বসে শান্তভাবে কথা বলা,
নিজের অদৃশ্য ভেতরের ভেতরকার গল্পগুলো শোনানো।
আমি আমার সব গোপন কথা খুলে বলবো,
আমি নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী হবো,
এই যাত্রা কোনো শেষ নয়, বরং শুধুমাত্র শুরু,
আমি নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি,
এই পথেই আমার জীবনের মেলবন্ধন গড়েছি।
আমার অন্তরে আজও বাজে সেই অনন্ত প্রশ্নগুলো—
“আমি কে?”, “আমি কী চাই?”,
একটি বিষণ্ণ সুরে, যা নিশীত রাতে বাজে,
আমার বুকে জমে থাকা নিঃশব্দ নিঃশ্বাসের মতো।
আমি চলেছি অন্ধকারের আঁধারে,
হাজার ফাঁক দিয়ে আলো খুঁজেছি,
কিন্তু সেই আলো ছিলো আমার নিজের ভিতরে লুকানো,
আমি নিজেকে বারবার জাগিয়ে তুলেছি, আলো ছড়িয়েছি নিজ ভেতরেই।
তুমি যখন বলেছিলে, “তুমি পারবে না”,
আমি চুপচাপ ছিলাম, কিন্তু ভেতরে জ্বলে উঠেছিল এক অগ্নি,
যে অগ্নি আজও জ্বলছে,
আমাকে নতুন করে আমি হওয়ার সাহস দিচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে।
আমি ভেঙেছি, পড়ে গেছি,
তবুও উঠেছি, মাথা উঁচু করে,
কারণ আমি জানি—
নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আরেক নাম হলো জীবন,
আর জীবন মানে অবিরাম লড়াই, অবিরাম আশা।
নিজেকে ভালোবাসা, নিজেকে ক্ষমা করা—
এগুলো হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ,
তবু আমি শিখেছি ধীরে ধীরে,
হারিয়ে যাওয়া সেই আমি আজও আমার ভেতরে বাসে।
আমি আদর করি আমার ভেতরের শিশুটিকে,
যে একসময় ভয় পেত নিজের ছায়ায়,
আজ সে নিজেকে আঁকড়ে ধরে,
আর বলে— “তুমি একলা নও, আমি আছি তোমার পাশে।”
আমার ভেতরে আজও ঝড় ওঠে,
তবুও সেই ঝড়ের মাঝেই আমি দাঁড়িয়ে থাকি,
একটি নতুন আশার আলোকে স্পর্শ করার জন্য,
যেখানে আমি নিজেকে ভালোবাসি, আমি নিজেকে বুঝি।
এই যাত্রায় আছে এক একাকীত্ব,
যা কখনো হাসি, কখনো কান্না, কখনো গভীর নিঃশ্বাসের মতো,
আমার অন্তরের বেদনায় বোনা এক গান,
যা শুনে আমি নিজেকে স্পর্শ করি, নিজেকে পাই।
আমি জানি, আমার যাত্রা কখনো শেষ হবে না,
কারণ নিজেকে খুঁজে পাওয়া মানে এক জীবনের গল্প,
একটি অসীম পথ,
যেখানে প্রতিদিন নতুন করে জন্মাই, নতুন করে বেঁচে থাকি।
আজ আমি বলি—
আমি হবো নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু,
নিজের ভালোবাসার গল্পের লেখক,
যা আমি কখনো ভুলবো না, যা আমি কখনো ছুঁড়ে ফেলবো না।