গল্পের কথক বেনীমাধব সিং, যিনি বংশগতভাবে রাজপুত হলেও কবিসত্তার অধিকারী। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে ইংরেজদের হাতে তাঁর সবকিছু নষ্ট হয়। কবিসত্তার কারণেই তিনি মির্জা গালিবের দর্শনের জন্য গভীর আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেন। বেনীমাধবের কবি-নাম ‘রুসওয়া’, যার অর্থ ‘বদনাম’। ঘটনাচক্রে, রুসওয়া কানপুর থেকে দিল্লি যাত্রা করেন মির্জা গালিবের সঙ্গে সাক্ষাতের আশায়। তৎকালীন দিল্লির জৌলুসহীন চেহারা রুসওয়ার চোখে ধরা পড়ে—চাঁদনি চওক, জামা মসজিদ, যমুনাঘাটের মতো জায়গাগুলো, যেগুলোর ওপর একসময় দিল্লির অস্তিত্ব নির্ভর করত তার সব-ই এখন ইংরেজ শাসনের ফলে অতীত। লেখক অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তৎকালীন দিল্লির সমাজ ও সংস্কৃতির চিত্র তুলে ধরেছেন। গল্পের অন্যতম আকর্ষণ সেই সময়কার ঘরোয়া কবিতার আসর এবং মুশায়রা। সেখানে কবি ও শাগির্দদের পান্ডিত্য, কবিতার রীতিনীতি পাঠককে আকর্ষিত করবে। এছাড়াও দিল্লির প্রসিদ্ধ খাবারের বর্ণনা গল্পটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। রুসওয়ার মাধ্যমে পাঠক পরিচিত হন তৎকালীন বেশ কিছু কবি এবং তাঁদের শের-শায়রীর সঙ্গে। সেইসঙ্গে তাঁদের জীবনধারা ও স্বকীয় কায়দা-কানুনেরও পরিচয় মেলে। গল্পের কেন্দ্রবিন্দু হলো রুসওয়ার মির্জা গালিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ। পাঠক সেখানে দেখতে পান গালিব কেবল একজন বিখ্যাত উর্দু-ফারসি কবি নন, বরং তাঁর ব্যক্তিত্বও প্রবল।যদিও গালিব সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা গল্পে নেই, তবে তাঁর জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও আচরণ সম্পর্কে পাঠক ধারণা অর্জন করবে। সবশেষে এই বছরে পড়া অন্যতম সেরা একটি বই “মির্জা গালিবের সঙ্গে দেখা”।লেখকের প্রথম পড়া বই হিসেবে দারুণ উপভোগ্য এবং হাইলি রেকমেন্ডেড।