কিভাবে লেখক হওয়া যায়?

আমাদের মাথায় ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নগুলোর মধ্যে অনেক ব্যসিক বা বলা যায় অনেক কমন একটা প্রশ্ন এটা যে কিভাবে লেখালেখি শুরু করা যায়। কিংবা কিভাবে ভালো লেখক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া যায়।
যাইহোক, এবিষয়ে লেখার আগে একটা ডিসক্লেইমার বা বলা যায় সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দেয়া জরুরি – সেটা হলো আমি লেখক না। টুকটাক গ্রুপে আর ব্লগে লেখি। এখানে লেখা বেশিরভাগ টিপ্সই জে. কে রাউলিং, সাদাত হোসাইন, কিঙ্কর আহসান সহ বিভিন্ন লেখকের কাছে পাওয়া। আর কিছু ইন্টারনেটে দেখে ভালো লেগেছে।
শুরু করা যাক।
প্রচুর পড়াঃ এটা একদম ফার্স্ট টিপ যেটা সবাই জানি আমরা। তাও আবারও বলতে চাই কয়েক শত বই পড়লে একটা লাইন লেখার দুঃসাধ্য করা যায়। তাই প্রতিনিয়ত পড়তে হবে। আর বই পড়ার মধ্যে থাকলে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ সহজ হয়। অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাব্জেক্ট, সাথে অব্জেক্ট পুরো নতুন করে চোখে পরে।
লেখক হওয়া ছাড়াও বই পড়া দরকার- মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ ও কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির জন্য। এছাড়া দরকার অন্যান্য সাহিত্যিকদের চিন্তা চেতনা বুঝার জন্য। একধরনের ঘোরের সৃষ্টি হয় বই পড়লে। কিছু জানার জন্য সহজেই গুগল করা যায় এখন। তবে বই পড়ে সেই জিনিসগুলো মনে হয় চোখের সামনেই ঘটছে।
বই বা সিনেমা নিয়ে চিন্তা করাঃ হ্যাঁ। বইয়ের সাথে সিনেমা দেখাও জরুরি একজন ভালো লেখক বা গল্পকথক হতে চাইলে। তেমনিভাবে অমিতাভ রেজা বলেন, “একজন ভালো মুভিমেকার হতে চাইলে অবশ্য কর্তব্য ভালো বই পড়া।”
একটা জিনিস ট্রাই করতে পারেন- সিনেমা যখন দেখবেন বা কোনো বই যখন পড়বেন সেটা অর্ধেক পড়ে রেখে দিন। এরপর মনে মনে চিন্তা করুন সিনেমার পরের কাহিনী কি? বা বই এ এরপর কি কি ঘটবে?
এভাবে নিজের মতো করে একটা চিত্র কল্পনা করে আবার বাকী বইটি বা সিনেমাটি শেষ করে ফেলুন। যদি আপনার কাহিনীর সাথে মিলে যায় সিনেমা তবে তো ভালোই। যদি না মিলে – তখনই সৃষ্টি হয়ে যাবে নতুন একটি গল্প। যার স্রষ্টা আপনি।
অনুভূতিকে স্পর্শঃ একজন লেখকের বা একটা মুভিমেকারের অবশ্য তার সৃজনশীলতার মাধ্যমে অপরের অনুভূতিকে স্পর্শ করা। লেখক আসলে চিৎকার করে তার নিজের অনুভূতি জানাতে চায়। যার চিৎকারটা যতো জোরে হবে তার ক্ষেত্রে বেশি পাঠককে ছুঁয়ে দিবে সেই লেখনী।
জীবন পড়াঃ বইয়ের সাথে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস যেটা অনেকে মিস করে যাই আমরা সেটা হলো জীবনকে পড়া। বইএর সাথে জীবন পড়তে না পারলে সেটাকে ভাষায় আসলে ফুটিয়ে তোলা দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়।
পৃথিবীতে এমন অনেকে আছে যারা হাজার হাজার বই পড়েছে তবে এক লাইনও লেখে নি। আবার অনেকে আছে যারা কোনো বই না পড়েও বই লিখেছেন। পৃথিবীর প্রথম বই কেউ না কেউ লিখেছে। সে কি তবে কিছুই পড়েনি? সে আসলে জীবনকে পড়েছে।
আমাদের এই জগৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পরমাণুর সাথে ছোট্ট ছোট্ট অনেক গল্প দিয়েও তৈরি। সেই গল্পগুলো আমাদের পড়তে পারতে হবে। প্রত্যেকের নিজের কিছু গল্প থাকে যেটা হয়তো অনেকের সাথেই মিলে যায়। সেই গল্পকে ভাষায় রূপ দিলে হয়তো অনবদ্য এক রচনাও হয়ে যেতে পারে।
অভিধান পড়াঃ বই বা যেকোনো লেখার জন্য বানান বা শব্দার্থ জানা অনেক প্রয়োজনীয় কিছু ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত অভিধান পড়লে বানানের উৎপত্তি, অর্থ, ব্যবহার আর সঠিক উচ্চারণ জানা যায়। যেটা পরবর্তীতে কোন শব্দ কোথায় প্রয়োগ করা যায় সেটা নিয়ে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। তাছাড়া জ্ঞান এমন একটা জিনিস যে কাজে না এসে খালি হাতে ফেরত যাবে না।
নিয়মিত লেখালেখিঃ প্রতিনিয়ত লেখা মানে এটা নয় যে যেদিনই লেখতে বসবো সেদিনই একটা গল্প বা উপন্যাস লেখে ফেলবো। নিয়মিত লেখা একেকজনের সাপেক্ষে একেকরকম। তবে কিছু না কিছু তো লেখতেই হবে। হোক সেটা এক লাইন বা হোক ৫/১০ মিনিট কিছু লেখা। রাইটার্স ব্লকে থাকলে সেটা আলাদা ব্যাপার।
আর মানুষ যেহেতু পরে লেখক আগে পাঠক। তাই রিডার্স ব্লকে থাকলে বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা কমিক্স ট্রাই করা যেতে পারে।
অনুবাদঃ নতুন লেখকদের ক্ষেত্রে এটা অনেক বেশি কাজে আসে। নিউ কিছু লেখার থেকে পুরোনো লেখা অনুবাদ করে নিজের যাত্রা শুরু করা। এর আবার সুবিধাও আছে। আপনার অনেক ভালো ইংরেজি না জানলেও চলবে। মোটামুটি যদি বুঝার মতো কাজ চালাতে পারেন তবেই হবে।
পরিশেষে একটা কথাই বলব, গলায় সুর না থাকলে আমি গায়ক হবো বলে যেমন লাভ নেই। তেমনিভাবে লেখাটা ভেতর থেকে না আসলে লেখক হওয়াও মুশকিল। নিজেকে যাচাই করতে লেখুন বারবার। নিজের আশেপাশে মানুষজনকে দেখান।
আর নবীন লেখা পাঠাতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট তো আছেই।